আমার জীবনে এ তিন জনের সাথে সম্পর্ক ছিল। তিনজনই আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। অনেক সহজ সরল আর বোকা ছিলাম।
প্রথমজন জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। তখন আমি ঢাকায় নতুন, কিছুই চিনতাম না। আর এই সম্পর্ক স্থাপনের কারণ হল আমি যেন তাকে
ছেড়ে কোনদিন চলে না যাই। তো, আমিও ভাবতাম সে মনে হয় আমাকে অনেক ভালবাসে কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর তার আসল চেহারা
দেখলাম।সে আমার রুমমেটদের সাথে আমার অনুপস্থিতিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। আর আমি শা’রীরিক সম্পর্কে তাঁকে সাপোর্ট
দিতাম না এবং তাকে বুঝাতাম এটা গুনাহ। কিন্তু এটাই তার কাছে মূল বিষয় ছিল।
তার এই অন্য মেয়েদের উপর টান এবং শারীরিক সম্পর্কের জন্যই আমি ব্রেকআপ করলাম। আর হ্যাঁ অনেকভাবে বিয়ের কথা বলেছি কিন্তু সে
নারাজ।তার দুই বছর পর আরেকটা ছেলের সাথে সম্পর্ক হয় এবং সে আমার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল যে আমরা বিয়ে করব। আর হঠাৎ করেই
একদিন শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেল আর তার পর থেকে সে আমায় চিনতো না। কিছুদিন পর খবর পেলাম সে তার আগের জিএফ কে বিয়ে
করেছে।তার কিছুদিন পর আরেকটা ছেলের সাথে আমার কথা হয়, ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
একটা সময় আমাদের relation হয়। একদিন বিয়ের কথা তুলতে সে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে কারণ আমরা গরীব এবং বাবা নেই বলে।
আপু বিশ্বাস করেন আমি তাদের মন থেকেই ভালবাসতাম আর আমি এখনো পর্যন্ত কারো সাথে অভিনয় নামক জিনিসটা করতে পারি না।
একেকটা relation শেষ হওয়ায় আমি কিভাবে বেঁচে আছি একমাত্র আল্লাহ্ই ভালো জানেন।এখন পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ,
তাই বাসা থেকে বিয়ের প্রেসার দেওয়ার পাশাপাশি অনেক রকম মা’নসিক নি’র্যাতন করা হয়।
যেমন- বিয়েতে রাজি না হওয়া, But সবাই চাকরি করে আমি কেন করি না যদিও চাকরি খুঁজছি, আমি মানুষের সাথে কেন মিশতে পারি না,
ভালো করে কথা বলতে পারি না, আমি কেন এতো চিকন, then কেন সারাক্ষন রুমের মধ্যেই পড়ে থাকি ইত্যাদি।
আপু ধোঁকা খাওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত মনে হয় ১০০ বার আ’ত্মহ’ত্যা করার চেষ্টা করেছি।
আমি তো একটা সোলমেট ছাড়া আর কিছুই চাইনি। কিন্ত আম্মুর নিষ্পাপ চেহারাটা ভেসে উঠায় আমি এখনো জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আসছি।
ছেলেদের উপর একটা বি’শ্রী ঘৃ’ণা জন্মে গিয়েছে তাই কোন ছেলেকেই বিশ্বাস হয়না একারণে বিয়েতে রাজি হইনা। তবে আপু আমি একটা
ডিসিশন নিয়েছি যে যদি বিয়ে করাই লাগে তাহলে আমার অতীত তাকে খুলে বলব কারণ আমি কোন মিথ্যা সম্পর্কে জড়াতে চাই না।
পরামর্শ: সত্যি কথা বলবো? হ্যাঁ আপু, আমার কাছে আপনার সমস্যার সমাধান আছে। কিন্তু আমি যে সমাধান দিব, সেটা কি আপনি মেনে
চলবেন বা চলতে পারবেন? তারপরও চেষ্টা করছি বলার। যদি সম্ভব হয় চিঠিটি মন দিয়ে পড়বেন।নিজের সমস্যার সমাধানের আগে এটা জানাটা
খুবই জরুরী যে আপনি ভুলটা কোথায় করেছেন। কারণ নিজের ভুল জানা না গেলে সেটা শুধরে নেয়া সম্ভব নয়।
আপনার চিঠি জুড়ে আরেকজনের বিরু’দ্ধে কমপ্লেইন লেখা। অমুকে আমার সাথে জোর করে শা’রীরিক স’ম্পর্ক করেছে
আরেকজন হঠাৎ শা’রীরিক সম্পর্ক করেছে, আরেকজনের সাথে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক হয়ে গেছে… তাঁদের কারণে আমি আ’ত্মহ’ত্যা করতে
চেয়েছি, পরিবার আমাকে নি’র্যাতন করছে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো আপু, এসবে আপনার কি একটুও ভুল
নেই? একটা মানুষ আপনার সাথে কী করে শারীরিক সম্পর্ক করবে, যদি আপনি তাঁর সাথে তেমন নিরিবিলি কোথাও না যান?
পথে ঘাটে বা ফাস্টফুড শপে তো কেউ আর জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে না, তাই না?
আর দশটি মানুষ যেমন পাবলিক প্লেসে প্রেমিকের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে, তেমনটা করলে ক্ষতি কী ছিল বলুন তো? আপনি নিজে মনে
করছেন এটা গুনাহ, কিন্তু নিজের বারবার প্রেমিকদের সাথে এমন জায়গায় যাচ্ছেন যেখানে তাঁরা আপনাকে জোর করতে পারে।
এখানে কি আপনার একটুও ভুল নেই, আপু?আমি জানি, আমার কথাগুলো আপনার খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু এটা সত্য যে আপনি ভুল
করেছেন আপু। মানুষ চিনতে ভুল করেছেন, প্রেমিক বেছে নিতে ভুল করেছেন,
প্রেমে কতটা সীমারেখা রাখা উচিত বা উচিত না সেটা বুঝতেও ভুল করেছেন। সবচাইতে বড় ভুল করেছেন
একটা relation শেষ হবার পর চট করে আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে ও সেই ভাঙা relation থেকে শিক্ষা না নিয়ে।
আপু, আপনি এখন পর্যন্ত কোন সম্পর্কে সম্মান পান নি, কারণ আপনি নিজেই নিজেকে সম্মান করেন না।
আপনি নিজেই নিজেকে গরীব, রোগা এসব মনে করেন, একটা ছেলে ধোঁকা দিল বলে নিজের জীবন শেষ করে ফেলতে চান আর নিজেই
নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। তাহলে পৃথিবী কীভাবে আপনাকে মূল্য দেবে আপু?
অন্যের কাছে মূল্য পাবার জন্য আগে নিজেকে সম্মান করতে হবে, নিজেকে মূল্য দিতে হবে।
নারীর জীবন কি কেবলই প্রেমিক, বিয়ে আর সোলমেটে? জীবন সিনেমা নয় আপু, বাস্তব জীবনে সিনেমার মত কাহিনী আশা করবেন না।
বাস্তব জীবনের প্রেমে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে হয়। অনেক কষ্ট করে ধরে রাখতে হয় সম্পর্ক। বাস্তবের সোলমেট সিনেমার মত প্রিন্স
চারমিং হয় না যে ঘোড়ায় চড়ে আসবে আর আপনার সব সমস্যা মিটে যাবে। নিজের সমস্যা নিজেকেই মেটাতে হবে। একজন সচেতন পুরুষ
তখনই আপনাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে যোগ্য মনে করবেন, যখন তিনি আপনাকে নিজের সমান সমান দেখবেন। গ্রাজুয়েশন করা একজন মানুষ,
ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা না করে কেবলই প্রেম ও ধোঁকা নিয়ে চিন্তা করে হতাশায় ভুগছেন…
তাহলে কীভাবে একজন সুস্থ বুদ্ধির সচেতন পুরুষ আপনাকে ভালবাসবেন বলুন তো, যেখানে আপনি নিজেই নিজেকে ভালোবাসেন না?