দরিদ্র ভ্যান চালক বাবার ছেলে সবুজের ছোট্র বেলার স্বপ্ন প্লেন বানানো, চাইলেই তো আর সব হয়না। তবে প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর সৃষ্ঠিশীল চেতনা যে মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখায় তাঁর উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষুদে বিজ্ঞানী সবুজ।




দারিদ্রের কষাঘাতে বেড়ে উঠা ভ্যান চালক একরামুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (১৮) সদ্য এসএসসি পাশ করে পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তাতে কি দারিদ্র কিংবা বয়স কোনটিই বাধা হতে পারেনি সবুজের। মাত্র ৪৫ দিনেই নিজস্ব মেধা মননকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করেছে চালক বিহীন বিমান (ড্রোন)।




দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের দরিদ্র ভ্যান চালক একরামুল সরদার এর ছেলে সবুজ সরদার (১৮) সদ্য এসএসসি পাশ করলেও। স্বপ্নের প্লেন বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে কোন কিছু করতে গেলে প্রয়োজন অধ্যাবসার। সবুজের চালক বিহীন বিমান (ড্রোন) এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, এবং সকলের নজর কেড়েছে। গ্রামের শূণ্য আকাশ দাঁপিয়ে বেড়া সেই বিমান দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিশু কিশোর সহ নানা বয়সের উৎসুক জনতা।




স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পলি শিবনগর মহেশপুর গ্রামের ভ্যান চালক মো. একরামুল সরদারের ছেলে মো. সবুজ সরদার (১৮)। সে ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য (২০২১ সালে) এসএসসি পাশ করে, বর্তমানে দিনাজপুর উত্তরণ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন নিজের তৈরী বিমান আকাশে উড়াবে। সেই শখ থেকেই মাত্র ৪৫দিনে মেধাবী এই শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন একটি চালক বিহীন বিমান।




তার উদ্ভাবিত বিমানটির অবকাঠামো কর্কশিটের তৈরি হলেও রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এদেশেও উৎপাদন হতে পারে বিশ্বমানের চালক বিহীন বিমান (ড্রোন), এমনটাই মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পলি শিবনগর জামে মসজিদের পাশে ফসলের মাঠে চালক বিহীন বিমান উড়াচ্ছেন সবুজ। তা উপভোগ করতে ভীড় জমিয়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সহ নানা বয়সী উৎসুক জনতা।




মহেশপুর গ্রামের মো. জিয়ারুল হক সরদার বলেন, সবুজ লেখাপড়ার পাশাপাশি পাঠকপাড়া বাজারে মোবাইল মেকানিকের কাজও করে। সেখান থেকেই চালক বিহীন বিমান তৈরির চিন্তা
মাথায় আসে তার। একইভাবে ওই গ্রামের মহসিন আলী সরদার বলেন, ছেলেটি মেধাবি এবং পরিশ্রমি, তার আচার ব্যবহার অত্তন্ত ভালো ।সরকারী সহায়তা পেলে হয়ত আরও ভালো কিছু করতে
পারবে।




সবুজের মা শেফালী বেগম বলেন, অভাবের সংসারে সবসময় এটা সেটা কিনে খুটখাট কাজ করে সবুজ। বাবার বকুনির ভয়ে অনেক সময় চুপে চুপে এসব কাজ করে। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে দামী যন্ত্র কিনেও ভয়ে যন্ত্রপাতির দাম অনেক কম বলে প্রচার করে বাবার কাছে। উদ্ভাবন প্রসঙ্গে ক্ষুদে বিজ্ঞানী সবুজ সরদার বলেন, সবসময় ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা মাথায় আসে। অর্থের অভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়না। এই চালক বিহীন বিমানটি তৈরিতে দেড়মাস সময় লেগেছে। খরচ হয়েছে প্রায় ১২হাজার টাকা।




একবার চার্জ করলে ত্রিশ মিনিট আকাশে উড়তে পারে। অনায়াসে ভূমি থেকে কিংবা হাতে নিয়েও উড়ানো যায়। রিমোটের সাহায্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটি। যথাযথ উন্নয়ন করা গেলে এর সাহায্যে সামরিক নজরদারী, কৃষি ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন কাজ করা সম্ভব হবে এমনটিই জানায় ওই ক্ষুদে বিজ্ঞানী। সবুজ আরো জানায়, সে এমন একটি ড্রোন তৈরী করতে চায়, যা দিয়ে ফসলী জমিতে অল্প সময়ে সহজেই কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে। প্রযুক্তির সাহায্যে এধরনের কিছু উদ্ভাবন করতে হলে প্রয়োজন অর্থের, তাই সরকারী ভাবে যদি তাকে সহায়তা করা হয়, তবে সে আরো নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করতে পারবে।



